দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, নিচে ভয়াল বিপুল জলরাশি। কথা বলছি বাঁকুড়া পাত্রসায়ের এলাকার গোস্বামী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শালী নদীর, আর তার ওপরে বাঁকুড়ার সঙ্গে বর্ধমানের শর্টকাট যোগাযোগের সৃষ্টিকারী নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। আর এই পথ ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবন কাটান আট থেকে দশটি গ্রামের প্রায় সাত থেকে আট হাজার মানুষ। বাঁকুড়া পাত্রসায়ের ব্লকের গোস্বামীগ্রাম, ভগবতীপুর, মামুদপুর, বিক্রমপুর, শালখারা,পুরাতন গ্রামের মানুষের দোকান, বাজার, হাসপাতাল, স্কুল,কলেজসহ বিভিন্ন জিনিসের যোগাযোগ সৃষ্টি করে এই বাঁশের সাঁকো। শালী নদীর উপরে বাঁশের সাঁকো ভরা বর্ষায় ভয়াল আকার ধারণ করে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পান গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। প্রাণ হাতে নিয়ে বর্ষার এই তিন চার মাস চলাচল করতে হয়।
ভোট আসে ভোট যায়। আশ্বাস মিললেও সমস্যা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। ডান বাম কোন পক্ষই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের একমাত্র সমস্থান এই বাঁশের সাঁকো। শালী নদীর উপরে তৈরি এই সাঁকো দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে চলে পারাপার। আতঙ্কে দিন কাটছে গ্রামবাসীদের। এই বর্ষায় সেই বাঁশের সাঁকোর পাঁচটি খুটি ভেঙে পড়েছে। দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে গ্রামের খেটেখাওয়া কৃষিজীবী মানুষদের।
এই বাঁশের সাঁকো পেরিয়েই সাত আটটি গ্রামের ছাত্র ছাত্রীদের স্কুল কলেজ যেতে হয়। এবছর লকডাউন এর কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও এই বাঁশের সাঁকো পরিয়ে টিউশনি পড়তে যায় প্রায় দুহাজায় ছাত্র ছাত্রী প্রাণ হাতে নিয়েই। যতক্ষণ না বাড়ি ফিরে আসে ততক্ষণ অভিভাবকদের কাছে বিভীষিকা পরিস্থিতি দুঃসহ অবস্থা। আর ভরা বর্ষায় যদি বাঁশের সাঁকোই ঢুকে যায় নৌকাই ভরসা। আর নৌকো না থাকলে বন্ধ পড়াশোনা বন্ধ টিউশনি।
শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রী কেন, গর্ভবতী মহিলা থেকে মুমূর্ষু রোগী সমস্যায় পড়তে হয় সকলকেই। সাঁকো ব্যবহার না করলে বেলুট হয়ে ঘুরে যেতে হবে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা। সেই বাড়তি সময় এবং পরিশ্রম বাঁচাতেই সাঁকোর রাস্তায় ব্যবহার করেন সকলেই।ঘুরপথে রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। গ্রামে আসতে চায় না কোন অ্যাম্বুলেন্স জরুরী পরিষেবা।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থার নির্ভর করে কৃষি কাজের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে শাকসবজি বাজারজাত করতে কালঘাম ছুটে যায়। তাই জমি থেকেই পাইকারি দরে আনাজ,সবজি, তরিতরকারি বেচে দিতে বাধ্য হন এলাকার কৃষকরা।
এই বাঁশের সাঁকো দিয়েই অন্য সময় চলাচল করে টোটো অটো সহ হালকা যানবাহন। কিন্তু বর্ষায় খুটি ভেঙে পড়ায় এখন শুধু বাইক এবং বাইসাইকেল ভরসা। নড়বড়ে সেতু দিয়ে চলাচল করতে হলে বুক দুর দুর করে। এই বুঝি ভেঙে পড়ল সেতু। কিন্তু এই দুর্ভোগ আর কদিন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে স্থানীয় মানুষ, ছাত্র ছাত্রী সহ কৃষিজীবী মানুষের মনে।
ব্রিজ তৈরি প্রশ্নে বিজেপি তৃণমূল রাজনৈতিক কাদা ছোড়াঁছুড়িতে ব্যস্ত। সমস্যা যে রয়েছে মেনে নিয়েছেন দুপক্ষই। একদিকের ব্রিজের অবস্থা সত্যিই খারাপ। কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপূরণ প্রশাসনিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই দাবি বিজেপির।
গোস্বামী গ্রামের উপর কজওয়ে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমতি চেয়ে পড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। সেই আশ্বাস কবে বাস্তবে রূপ পায় সেদিকে তাকিয়েই সাত থেকে আটটি গ্রামের মানুষ। কবে বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে তৈরি হবে কংক্রিটের ব্রিজ সেদিকে তাকিয়ে আমরাও।